কিডনি রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি চাই সচেতনতা

Posted on April 07, 2022 | By Praava Health | About Praava
কিডনি রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি চাই সচেতনতা

কিডনি মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বের ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন এবং বাংলাদেশে প্রতি ৭ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিন্তু নানা রোগে আক্রান্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কখনো কখনো কিডনি বিকল হয়ে পড়ে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। বিশ্বে প্রতিবছর ২.৪ মিলিয়ন মানুষ কিডনি জনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। তাই কিডনির সুস্বাস্থ্য ও সচেতনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রতি বছর পালিত হয় বিশ্ব কিডনি দিবস। এবছরের কিডনি দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ব্রিজ দ্য নলেজ গ্যাপ টু বেটার কিডনি কেয়ার’, অর্থাৎ কিডনির যত্ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে এর সম্পর্কে বাড়তি সচেতনতা সৃষ্টি।

মানব শরীরে কিডনির প্রয়োজনীয়তা 

কিডনির মাধ্যমেই মানবশরীরে রক্ত প্রবাহিত হয়। কিডনিতে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন থাকে, যা রক্তে জমে থাকা দূষিত বা বর্জ্য পদার্থ আলাদা করে প্রস্রাবের মাধ্যমে নিষ্কাশন করাই মূলত কিডনির প্রধান কাজ। তবে শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, বিভিন্ন হরমোন তৈরি ও তৈরিতে সাহায্য করা, রক্তকনা তৈরিতে সাহায্য ও শরীরের হাড়কে সুস্থ রাখা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে কিডনি। তাই বোঝাই যাচ্ছে যে, কিডনি সুস্থ না থাকলে এসব কাজে বিঘ্ন ঘটে এবং শারীরিক বিপর্যয় দেখা দেয়। দিন দিন বিভিন্ন কারণে বাড়ছে কিডনি রোগের প্রকোপ। অথচ একটু সচেতন হলেই আমরা কিডনি সুস্থ রাখতে পারি। 

কারণ ও উপসর্গসমূহ

কিডনি রোগীদের অধিকাংশই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। অনিয়ন্ত্রিত ও দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ। আরেকটি কারণ হলো উচ্চ-রক্তচাপ। এটিও ডায়াবেটিসের মতো নীরব ঘাতক। গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, পলিসিস্টিক-এর মতো কিডনি জটিলতার কারণে উচ্চ-রক্তচাপ হতে পারে। ফলে উচ্চ-রক্তচাপের কারণ খুঁজতে গিয়ে কিডনির অন্তর্নিহিত আরেকটি রোগও ধরা পড়তে পারে। অন্যদিকে, শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। ডায়ারিয়া, বমি পানিশূন্যতার অন্যতম কারণ। তবে অতিরিক্ত গরম, পুড়ে যাওয়া, অতিরিক্ত রক্তপাত ইত্যাদি কারণে শরীর থেকে অনেক লবণ পানি বেরিয়ে যায়। ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং কিডনি বিকলতার আশঙ্কাও থাকে। পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকলেও কিডনি রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া প্রস্রাবের চাপ আটকে রাখা, শরীরে পুষ্টির অভাব, ধূমপান, অতিরিক্ত বা ভুলভাল ঔষধ খাওয়া ইত্যাদি কারণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। 

সাধারণত ৭০-৮০ ভাগ কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট বা বিকল হওয়ার আগে রোগের উপসর্গ বোঝা যায় না। তবে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাব, প্রস্রাব লাল হওয়া, প্রস্রাবে দুর্গন্ধ, কোমরের দুই পাশে ও তলপেটে ব্যথা, শরীর-মুখ ফোলা ইত্যাদি কিডনি রোগেরই সংকেত দেয়। এসব সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসার তিন মাসের মধ্যে রোগ না সারলে এটিকে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগ হিসেবে ধরা হয়। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও নেফ্রাইটিসের (কিডনির বিভিন্ন সমস্যা) কারণে শতকরা ৮০ ভাগ রোগীর কিডনি বিকল হয় বা ঝুঁকি থাকে। 

চিকিৎসা ও করণীয়

কিডনি রোগের চিকিৎসা কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও রোগ-পরীক্ষা তুলনামূলক সাশ্রয়ী। একটু সচেতন হলে ৫০-৬০ ভাগ ক্ষেত্রে সেই ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করলে; বছরে একবার কিডনি পরীক্ষা করলে; ডায়াবেটিস, উচ্চ-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে; চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যথানাশক ঔষধ না খেলে; অপুষ্টিকর ও ভেজাল খাবার পরিহার করলে; নিয়মিত হাঁটা, শারীরিক পরিশ্রম করলে কিডনিকে সুস্থ রাখা ও কিডনি রোগের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি প্রয়োজন শিক্ষক ও অন্যান্য সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিডনি রোগ সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলা।  

আমাদের দেশেই এখন কিডনি রোগের আধুনিক পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়, পরামর্শ এবং বিশ্বমানের চিকিৎসা সম্ভব। প্রাভা হেলথে রোগীরা ইউআরই (প্রস্রাবের রুটিন পরীক্ষা); ইউরিন অ্যালবুমিন; ক্রিয়েটিনাইন রেশিও (এসিআর); ইজিএফআর; কেইউবি এরিয়ার আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি পরীক্ষা করাতে পারবেন। এছাড়া আছে সিটি স্ক্যান, এমআরআই এবং কিডনি বায়োপসি সুবিধা।

সিকেডি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় সম্ভব নয়। তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যেতে পারে। সিকেডির অবস্থার উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে। তবে সর্বপ্রথম করণীয় হলো অস্বাভাবিক জীবনযাপন থেকে সরে আসা। যতটা সম্ভব সতর্ক থাকা ও শারীরিক-মানসিকভাবে সুস্থ থাকার চেষ্টা করা। এছাড়া, সময়মতো ঔষধ গ্রহণ করা। উচ্চ-রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ-কোলেস্টেরল ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণে রাখা। সিকেডি’র অবস্থা গুরুত্বর (স্টেজ ৫) হলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

সচেতনতা ও সুস্থ জীবনযাপনের চর্চার মাধ্যমে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তুলতে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

Featured In