শরীরে সুচ ঢুকিয়ে আদৌ কি চিকিত্সা সম্ভব? আকুপাংচারকে হাতুড়ে চিকিত্সা মনে করা অনেকের মনেই প্রশ্নটা আসতে পারে। আকুপাংচার আসলে কোনো হাতুড়ে চিকিত্সা নয়, বরং বিশ্বস্বাস্হ্য সংস্হা (ডব্লিউএইচও) স্বীকৃত এক কার্যকর চিকিত্সা পদ্ধতি। বিশ্বস্বাস্হ্য সংস্হার মতে, ১০৩টি শারীরিক সমস্যার সমাধানে আকুপাংচার কার্যকরী ভূমিকা রাখে। অন্যান্য প্রচলিত চিকিত্সাপদ্ধতি যখন কিছু রোগ নিরাময়ে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে, তখন অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি হিসেবে আকুপাংচারের নাম চলে আসে। তাই চীনে উদ্ভূত প্রায় ৫ হাজার বছরের পুরোনো এই চিকিত্সা পদ্ধতি বর্তমানে ১২০টি দেশে ব্যবহূত হচ্ছে।
যেসব রোগে আকুপাংচার কার্যকর ভূমিকা রাখছে
আকুপাংচার অনেক রোগের জন্যই উপকারী তবে নিম্নোক্ত রোগের জন্য আকুপাংচার কার্যকরী ভূমিকা পালন করে :১. অনিদ্রা (ইনসমনিয়া), অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা (স্ট্রেস) ও দীর্ঘমেয়াদি বিষণ²তা, ২. মাথাব্যথা, মাইগ্রেনের ব্যথা, কোমরব্যথা, বাতের ব্যথা, হূদ্যন্ত্রের ব্যথা, ৩. সার্ভাইকাল ও লাম্বার ডিস্ক প্রোল্যাপস, ৪. ফ্রোজেন সোল্ডার ও ঘাড় শক্ত (স্টিফ নেক) হয়ে যাওয়া, ৫. স্পোর্টস ইনজুরি, ৬. ব্রেন স্ট্রোক থেকে সৃষ্ট প্যারালাইসিস, ৭. ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়া, ৮. ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি, পলিনিউরাইটিস, পলিনিউরোপ্যাথি, ৯. ফেসিয়াল পলসি (গাল বাঁকা), ১০. শরীর কাঁপা (Tremor), খিঁচুনি (Epilepsy), ১১. পুরুষদের যৌন সমস্যা, স্ত্রীদের বন্ধ্যত্ব, বিভিন্ন স্ত্রীরোগ (ঋতুস্রাব সংক্রান্ত), ১২. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা আই বি এস।
আকুপাংচার যেভাবে কাজ করে
আকুপাংচার বিদ্যা অনুযায়ী, মানবদেহে অসংখ্য চ্যানেল বা মেরিডিয়ান আছে যেখানে আকুপাংচার পয়েন্ট অবস্হিত। এই চ্যানেল দিয়ে বায়োলজিক্যাল এনার্জি প্রবাহিত হয়। চাইনিজ ভাষায় এই এনার্জিকে ‘চি’ (খরঃব ঋড়ত্পব) বলা হয়। সুস্হ থাকতে হলে এই ‘চি’র ভারসাম্য থাকা অপরিহার্য। কোনো কারণে ‘চি’ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হলে বা ভারসাম্য নষ্ট হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। ফলে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। চিকিত্সার সময় কিছু বাধাগ্রস্ত মেরিডিয়ান পয়েন্টে সুচ ঢুকিয়ে ‘চি’ প্রবাহকে সচল করা হয়। এর ফলে মস্তিষ্কের নার্ভ উজ্জীবিত হয়ে রক্ত সঞ্চালন ও অক্সিজেন সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং মস্তিষ্ক উদ্দীপিত হয়ে ব্যথানাশক রাসায়নিক উপাদান নিঃসারণ হয়।
মেডিক্যাল ফিজিওলজির মতে, মানুষের সব রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা শরীরের মধ্যেই রয়েছে। সেখানে অসামঞ্জস্যতা হলেই মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। আরো পরিষ্কার করে বলতে গেলে, প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের শরীরে ব্যথানাশক হরমোন রয়েছে। এই হরমোন মস্তিষ্কের মিডব্রেন ও মেডুলা থেকে বের হয় এবং দেহের বাইরের অঙ্গগুলো থেকে ব্যথার অনুভূতি বয়ে আনা ‘নার্ভ ইম্পালস’ এর সঙ্গে একত্রিত হয়ে স্পাইনাল কর্ডে মিলিত হয়। মস্তিষ্ক থেকে আসা এই ব্যথানাশক নার্ভ ইম্পালস এন্ডোরফিন হরমোন ক্ষরণে সাহাঘ্য করে।
৭০-এর দশকে বিজ্ঞানীরা এন্ডোরফিন নামক এই রাসায়নিক পদার্থ চিহ্নিত করেছিলেন, যা ব্যথা উপশম করতে সাহাঘ্য করে। গবেষণার পর এখন এটি সুনিশ্চিতভাবে জানা গেছে যে, আকুপাংচার এই এন্ডোরফিনের ক্ষরণ বাড়ায় বা এন্ডোরফিনের প্রবাহ তৈরি করে মেরিডিয়ানের বাধাগ্রস্ত ‘চি’ প্রবাহ সঞ্চালন করে। ফলে শরীরের নিজস্ব ব্যথা কমানোর ‘নার্ভ ইম্পালস’ সক্রিয় হয়ে শরীরের ব্যথা হ্রাস পেতে শুরু করে। এই পদ্ধতিটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে যন্ত্রণাবিহীন, যা আকুপাংচারিস্ট ফিজিশিয়ানের কর্মদক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার দ্বারা সম্পাদন করে থাকেন। সাধারণত এই চিকিত্সা পদ্ধতি ১০ মিনিট থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত স্হায়ী হয়ে থাকে।
আকুপাংচার চিকিত্সার বৈশিষ্ট্যসমূহ
আকুপাংচার পদ্ধতিতে ওষুধ এবং বিশেষ কোনো পরীক্ষানিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না, তাই ওষুধজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ারও ঝুঁকি নেই। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ফলে পরবর্তী সময় রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পায়। অন্য কোনো চিকিত্সা পদ্ধতিতে নিরাময় হয় না, আকুপাংচারের যথার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে এমন কিছু জটিল রোগের চিকিত্সা সম্ভব। তবে সেবা প্রদানকারী আকুপাংচার স্পেশালিস্টের এই বিষয়ের ওপর দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এই যুগে আকুপাংচার পদ্ধতির নতুন সংস্করণ হিসেবে ইলেকট্রো আকুপাংচার ও লেজার আকুপাংচার ব্যবহূত হচ্ছে, যা উন্নত বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হচ্ছে। বর্তমানে প্রাভা হেলথ আকুপাংচার ও লেজার চিকিত্সা পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করছে। আকুপাংচার চিকিত্সা নেওয়ার জন্য বিনা মূল্যে কনসালটেশান এবং এর পরবর্তী প্রয়োজনীয় প্রসিডিওরে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট সুবিধাটি নিতে কল করুন ১০৬৪৮ এ নাম্বারে।
লেখক: এমবিবিএস (আরএমসি), বায়ো এনার্জেটিক মেডিসিন ও আকুপাংচার, ভিজিটিং স্পেশালিস্ট, প্রাভা হেলথ
Featured In